বেশ অনেক দিন হল আমার ব্লগ লিখা হচ্ছে না। প্রতিদিনই ভাবি আজ লিখব, সবকিছু লিখার জন্য প্রস্তুত করি কিন্তু আর লিখা হয় না।
আজ শুরু করেই দিলাম। মনে পরছে সেই ১৯৯৪~১৯৯৫ এর বিজয় দিবসের দিনগুলো। তখন পড়তাম প্রাইমারী স্কুলে (৩য় বা ৪র্থ ক্লাস হতে পারে)। প্রতিদিনের মত বাবা আজ আমাদের ঘুম থেকে উঠার তারা দিচ্ছে। বিশেষ করে আমার ছোট ভাই কে বাবা আদর করে “শুশুর” বলে ডকে বলে ঘুম থেকে উঠ না হলে তোমাকে কিন্তু রেখেই বড় বাবু (বাবা আমাকে ডাকত এই নামে) নিয়ে যাব।
যাইহোক আমারা দুই ভাই উঠে পরি। বাবার সাথে প্রথম (এর আগেও হতে পারে) স্টেডিয়াম এ যাওয়া। ও সে কি বিশাল মাঠ (এত ছোটতে) কত কত মানুষ, সবার হাতে লাল সবুজ পতাকা, আমার মত ছেলেমেয়েদের হাতে বেলুন, কারও হাতে লাল, গোলাপি হাওয়াই মিঠাই, বাঁশের বাঁশি (তখন প্লাস্টিক ছিলই না বলতে গেলে) আরও কত কিছু খেলনা।
মাইকে গান হচ্ছে “সব ক’টা জানালা খুলে দাও না” (শিল্পিঃ সাবিনা ইয়াসমিন) আর অনেক অনেক স্কুল পোশাক পরা ছেলে মেয়েরা লাইন হয়ে দারিয়ে আছে। কেউ বা পিটি করছে তখন বলতাম লেফট-রাইট অনেকটা পুলিশ বা আর্মির মত।
বাবা আমাদের নিয়ে বসালেন স্টেডিয়াম এর গ্যলারীর মাঝামাঝি। আমার ছোট ভাই বেশি ছোট হওয়ায় কিছুক্ষন পর পর বলছে বাবা এইটা কি ওইটা কি? আমিও অবশ্য সবকিছু তখন চিনিনা, ভালই হচ্ছে আমারও জানা হচ্ছে। কিচ্ছুক্ষন পর দেখি এক লোক মাঠের মাঝখানে অনেকগুলো বেলুন নিয়ে আসছে প্রধান মঞ্চের (রঙিন কাপড় দিয়ে সাজানো চেয়ার আর ছোপা) দিকে।
কিছুক্ষন পর মাইক এ ঘোষণা করল জেলা প্রশাসক মহাদয় বিজয় দিবসের উদ্বোধন করবেন। তখনই দেখি বেলুনগুলো আকাশের দিকে উরে যাচ্ছে! একি বেলুন আকাশে উরে নাকি? ওইটাই ছিল আমার প্রথম গ্যাস বেলুন দেখা। সাথে এক ঝাক সাদা, কাল ও বিভিন্ন রঙের কবুতর উরে চলে গেল। এই হল মূল পর্বের শুরু।
ছেলেমেয়েরা লাইন ধরে মার্চ করতে করতে চলে গেল। কি সুন্দর সবাই এক সাথে হাত নাড়িয়ে পাচালিয়ে যাচ্ছে। এরপর সুরু হল অভিনয় এর পালা কেউ মুক্তিযোদ্ধা সেজে বা কেউ বীরাঙ্গনা সেজে, কেউ বা রাজাকার ও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সেজে কত কি যে অভিনয় করে দেখাল সেটা মনে করতে পারছিনা।
এর বেশকিছু বছর পর আমাদের এলাকার ক্লাব থেকে প্রতিবছর আমরাও বিজয় দিবসে পিটি করে এবং ভাস্কর্য (চক পাওডার মেখে সাদা হয়ে যেতাম আমরা) সেজে অংশ গ্রহন করেছি। হায় সে সব দিন! ১৬ ডিসেম্বর এর আগে আমাদের পারার রাস্তায় আমরা পিটি করতাম আর পারার সবাই (ছোট থেকে বড়) আমাদের দেখত আর নিজেরা নিজেরা কথা বলত যাক আজ খেলাবাদ দিয়ে কাজের কাজ করছে।
আজ কত দিন হল আর বিজয় দিবস পালন করতে কোন মাঠে যাই না। জানি না কেমন হয় সব অনুষ্ঠান।
পরিশেষে শ্রদ্ধাভরে শরণ করছি সকল শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের, সকল মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সাহায্যকারী, বীরাঙ্গানা ও নাম না জান অসংখ্য মানুষদের যারা প্রান দিয়েছেন এই দেশের জন্য আমাদের এই স্বাধীনতার জন্য এবং অবশ্যই সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।